খুলনা, বাংলাদেশ | ১২ই চৈত্র, ১৪৩১ বঙ্গাব্দ | ২৬শে মার্চ, ২০২৫ খ্রিস্টাব্দ

Breaking News

  গাজীপুরের কেপিজে হাসপাতালে থেকে ঢাকার এভারকেয়ারে আনা হয়েছে তামিম ইকবালকে
  দেশবাসীকে ঈদের আগাম শুভেচ্ছা জানিয়েছেন প্রধান উপদেষ্টা

সিএন্ডএফ এ্যাসোসিয়েশন : আ.লীগ নেতার স্বাক্ষরে টাকা তুলে বিএনপি সমর্থিতদের ইফতার

নিজস্ব প্রতিবেদক

গতবছর ৫ আগস্ট গণঅভ্যুত্থানের পর থেকে মোংলা কাস্টমস এজেন্ট এ্যাসোসিয়েশনের সভাপতি ও সাধারণ সম্পাদক আত্মগোপনে রয়েছেন। শীর্ষ দুই ব্যক্তি আওয়ামী লীগের রাজনীতির সঙ্গে জড়িত থাকায় তাদের বাদ দিয়ে পাল্টা কমিটি করেন বিএনপি সমর্থিত ব্যবসায়ীরা। অ্যাসোসিয়েশন এখন তাদের নিয়ন্ত্রণে।

গত ২৪ মার্চ নগরীর একটি হোটেলে ইফতার পার্টির আয়োজন করে কাস্টমস এজেন্ট এ্যাসোসিয়েশনের বিএনপি সমর্থিতরা। এই পার্টির খরচের জন্য আওয়ামী লীগের নেতার স্বাক্ষরে ব্যাংক থেকে প্রায় ৫ লাখ টাকা তোলা হয়েছে। ৮ মাস ধরে পলাতক থাকা নেতাদের স্বাক্ষরে টাকা তোলার ঘটনায় সিএন্ডএফ ব্যবসায়ীদের মধ্যে তোলপাড় চলছে।

ব্যবসায়ীরা জানান, মোংলা কাস্টমস এজেন্ট (সিএন্ডএফ) এ্যাসোসিয়েশনের সভাপতি ছিলেন ঝালকাঠি উপজেলার সাবেক চেয়ারম্যান সুলতান হোসেন খান এবং সাধারণ সম্পাদক ছিলেন বাগেরহাট জেলা আওয়ামী লীগের সাংগঠনিক সম্পাদক শেখ লিয়াকত হোসেন। গত ৫ আগস্ট আওয়ামী লীগ সরকার পতনের পর তারা আত্মগোপনে চলে যান। বিভিন্ন থানায় তাদের বিরুদ্ধে একাধিক মামলা হয়।

তাদের অপসারণের দাবিতে গত ৪ নভেম্বর অ্যাসোসিয়েশনে তালা ঝুলিয়ে দেয় ছাত্ররা। তখন খুলনা মহানগর বিএনপির সাবেক সাধারণ সম্পাদক মনিরুজ্জামান মনিকে আহ্বায়ক করে একটি এডহক কমিটি গঠন করেন ব্যবসায়ীরা। কিন্তু এই কমিটি প্রত্যাখান করে খুলনা মহানগর ছাত্রদলের সাবেক আহ্বায়ক ইশতির ভাই মাহামুদুন চৌধুরী জনিকে সদস্য সচিব করে পাল্টা আহ্বায়ক কমিটি করে বিএনপি সমর্থিতরা। সুলতান-লিয়াকত কমিটির সদস্য মোশাররফ হোসেনকে করা হয় আহ্বায়ক। এই কমিটির বেশিরভাগই এ্যাসোসিয়েশনের সদস্য নন। প্রকৃত ব্যবসায়ীরা একদিকে এবং বিএনপি সমর্থিতরা উল্টো দিকে থাকায় এ্যাসোসিয়েশনের কার্যক্রমে অচলাবস্থা দেখা দেয়।

এর প্রেক্ষিতে সাবেক সভাপতি, সাধারণ সম্পাদকসহ আওয়ামী লীগের রাজনীতির সঙ্গে জড়িত ৫ জনকে বাদ দিয়ে কমিটি পুনগর্ঠন করা হয়। পুনর্গঠিত কমিটির সভাপতি করা হয় সাবেক সাধারণ সম্পাদক মাহমুদ আহসান টিটোকে। শ্রম অধিদপ্তর থেকে এই কমিটি অনুমোদনও দেওয়া হয়। কিন্তু বিএনপি সমর্থিতদের বাঁধায় তারা স্বাভাবিক কার্যক্রম পরিচালনা করতে পারেননি। এ্যাসোসিয়েশনের ব্যাংক হিসাবসহ অনেক কিছু এখনও সুলতান-লিয়াকতের নামেই রয়ে গেছে।

সূত্র জানায়, গত ১৮ মার্চ এ্যাসোসিয়েশনের ব্যাংক হিসাব থেকে ৫ লাখ টাকা উত্তোলন করা হয়। সেই চেকে স্বাক্ষর করেছেন সাবেক সভাপতি সুলতান হোসেন খান। অ্যাসোসিয়েশরে অফিস সেক্রেটারি মাসুদ রানা টাকাটি তুলেছেন। বিএনপি সমর্থিত ব্যবসায়ী মাহামুদুন চৌধুরী জনির আহ্বান করা ইফতারে খরচের জন্য টাকাটি রাখা হয়েছিল।

গত ২৪ মার্চ নগরীর টাইগার গার্ডেন হোটেলে অনুষ্ঠিত ইফতারে গিয়ে দেখা গেছে, আমন্ত্রিত অতিথিদের বেশিরভাগই বিএনপি, ছাত্রদল ও স্বেচ্ছাসেবক দল নেতা। মঞ্চে খুলনা মহানগর বিএনপির আহ্বায়ক শফিকুল আলম মনা, জনির ভাই ও ছাত্রদলের সাবেক সভাপতি ইসতিয়াক আহমেদ ইস্তি রয়েছেন।

সিএন্ডএফ অ্যাসোসিয়েশরে অফিস সেক্রেটারি মাসুদ রানা বলেন, মোশাররফ-জনির নির্দেশে অ্যাকাউন্ট থেকে টাকা তোলা হয়েছে। এবিষয়ে তারা বিস্তারিত তথ্য দিতে পারবে।

আত্মগোপনে থাকা আওয়ামী লীগ নেতাদের স্বাক্ষরে টাকা উত্তোলন প্রসঙ্গে মাহামুদুন চৌধুরী জনি বলেন, ব্যাংক হিসাব এখনও আমাদের নামে আসে নাই। তাই ইফতারে খরচের জন্য তার কাছ থেকে চেক আনা হয়েছে। তাহলে সিএন্ডএফ এ্যাসোসিয়েশনে কোন কমিটি বৈধ জানতে চাইলে তিনি দাবি করেন, আমাদের কমিটি বৈধ কমিটি। মাঝে মাঝে প্রয়োজনে তাদের স্বাক্ষর প্রয়োজন হচ্ছে।

তবে ব্যবসায়ীদের একটি সূত্র নিশ্চিত করেছে, এ্যাসোসিয়শনের ভোটার তালিকায় মাহামুদুন চৌধুরী জনির নাম নেই। তিনি বৈধ সদস্যও নন। মূলত বিএনপি নেতাদের ছত্র-ছায়ায় বহিরাগত হিসেবে সংগঠনটি দখল করেছেন তিনি।

এ্যাসোসিয়েশনের সভাপতি সুলতান হোসেন খান বলেন, ‘চেকে স্বাক্ষর করতে বলেছে, করে দিয়েছে। আমি এসব ঝামেলার মধ্যে আর নেই। আমাকে একটু মুক্তি দেওয়ার ব্যবস্থা করুন।’

বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের জেলা কমিটির সদস্য সচিব সাজিদুল ইসলাম বাপ্পী বলেন, শুরুর দিকে কমিটি পুনর্গঠনের সঙ্গে যুক্ত ছিলাম। পরে নানা জটিলতা দেখা দেওয়ায় এর সঙ্গে আমরা আর জড়িত নই।

ব্যবসায়ীরা জানান, ইতোপূর্বে নৌপরিবহন মালিক গ্রুপ ও চেম্বার অব কমার্সে একই ধরনের জটিলতা দেখা দেয়। প্রশাসক দায়িত্ব নেওয়ার মধ্য দিয়ে কিছুটা জটিলতার অবসান হয়েছে। সিএন্ডএফ এ্যাসোসিয়েশনেও একইভাবে সমস্যা সমাধানের উদ্যোগ নেওয়ার আহ্বান জানিয়েছেন ব্যবসায়ীরা।

 

খুলনা গেজেট/এএজে




খুলনা গেজেটের app পেতে ক্লিক করুন

এই ওয়েবসাইটের কোনো লেখা, ছবি, অডিও, ভিডিও অনুমতি ছাড়া ব্যবহার বেআইনি।

© 2020 khulnagazette all rights reserved

Developed By: Khulna IT, 01711903692

Don`t copy text!